১. চা শিল্প
বালিয়াডাঙ্গী একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা। উত্তর সীমান্তে নাগর নদী সংলগ্ন ভারতের তীর জুড়ে চা বাগান রয়েছে। একই ধরণের মাটির বৈশিষ্ট্য গুণাগুণ ও আবহাওয়া বিরাজ করায় বালিয়াডাঙ্গীতে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ইসলাম টি স্টেট ও গ্রীণ ফিল্ড টি স্টেট নামে দুটি বড় চা বাগান গড়ে উঠেছে। চা বাগানের সফলতা দেখে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ছোট ছোট বাগান গড়ে তুলেছে। একটি লাভজনক শিল্প হওয়ার কারণে চাষী পর্যায়ে চা চাষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে। চা চাষের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অচিরেই বালিয়াডাঙ্গীতে চা শিল্প গড়ে উঠবে বলে এলাকাবাসী প্রত্যাশা করে।
২. আম প্রক্রিয়াজাতকরণ
উপযুক্ত মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ুর কারণে বালিয়াডাঙ্গীতে বহুকাল আগে থেকেই আম চাষের প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে সূর্যাপুরী এই অঞ্চলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একটি জাত যা সহজেই উৎপন্ন হয়। সমস্ত উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ক্ষুদ্র বৃহৎ বিভিন্ন আকারের আমের বাগানে প্রচুর পরিমান আম উৎপাদিত হয়। কিন্তু এই এলাকায় আমের বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় এবং আম প্রক্রিয়াজাতকরণের কোন কারখানা না থাকায় আম চাষীরা ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সস্তা শ্রম ও কাঁচামালের(কাঁচা/পাকা আম) দাম কম থাকায় বালিয়াডাঙ্গীতে আম প্রক্রিয়াজাতকরণ(আচার, জুস, জ্যাম, জেলি) শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব।
৩. আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানী
বালিয়াডাঙ্গীর উঁচু জমি আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। শীতের আগমন আগাম হওয়ায় আগাম জাতের আলু বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে আগে বালিয়াডাঙ্গীতে আলু উৎপাদিত হয়। এই এলাকার মাটিতে সবধরণের আলু জন্মে থাকে। আলুর উৎপাদন বিঘা প্রতি ৬০-১০০ মণ। আলুর আকৃতি অনেক বড় এবং উজ্জ্বল রং বিশিষ্ট। অধিক উৎপাদনের কারণে বাজার মূল্য কম হওয়ায় প্রায় প্রতিবছর আলু চাষীরা ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সে লক্ষ্যে বালিয়াডাঙ্গী জরুরী ভিত্তিতে হিমাগার স্থাপন করা দরকার। ইদানিং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানী হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গীর আলু গুণেমানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় উদ্বৃত্ত আলু সহজেই বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব । কাঁচামালের সমারোহ অধিক থাকায় এই এলাকায় আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা একটি কৃষি প্রধান অঞ্চল। মাটির বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু ফসল উৎপাদনের জন্যে অত্যান্ত উপযোগী। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গীতে প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান, প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়। প্রচুর পরিমানে উৎকৃষ্ট মানের ভূট্টা উৎপাদিত হয়। এধরণের খাদ্যশস্য থেকে আটা, ময়দা, সুজি, শিশু খাদ্য ও বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী করার উপযোগী শিল্প কারখানা এ অঞ্চলে গড়ে তোলার সম্ভব।
৫. পর্যটন শিল্প
বালিয়াডাঙ্গী যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করে এমন কোন উল্লেখযোগ্য উপাদান হয় তো নেই তবুও এই অঞ্চলের প্রকৃতিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্বকীয়তা। রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত শস্য ক্ষেত্র আর সবুজ বৃক্ষরাজির আচ্ছাদিত শান্ত গ্রাম। বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের আবর্তন থাকায় পালাক্রমে সৌন্দর্যের পট পরিবর্তিত হয়। রয়েছে এঁকে-বেঁকে চলা ছোট নদী, সারি সারি আমের বাগান, নাগর নদীর দুই তীরে চা বাগান। হরিণমারী এলাকায় প্রায় ২ বিঘা জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন প্রায় ২০০-২৫০ বছর বয়সী ঐতিহাসিক সূর্যপুরী আমগাছ। শীতের শুরুতে উত্তর দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে তুষার আচ্ছাদিত বিশাল পর্বতমালার হিমালয়ের উচ্চশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ফতেহ্পুর মসজিদ, সনগাঁও শাহী মসজিদ, চাড়োল ৩ গম্বুজ মসজিদ, ভবানী বাবুর জমিদার বাড়ি ও হরিণমারী শিব মন্দির। আধারদিঘিসহ দুওসুও দিঘি, রতন দিঘি, লাহিড়ী হাটের বড় দিঘি, হরিণমারী দিঘিকে ঘিরে বিভিন্ন লোককাহিনী প্রচলিত আছে। ভবানী বাবুর জমিদার বাড়ি, রুপগঞ্জের জমিদারবাড়ি, গড়খাঁড়ি দুর্গ, বড়কোর্ট শহর সম্পর্কিত সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগীতায় এসব নিদর্শন সমূহের সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটনের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি এ অঞ্চলে পিকনিক স্পর্ট, শিশু পার্ক, ইকো পার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করা সম্ভব। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে উঁচু টাওয়ার এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে নাগর নদীর দুই তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। সবকিছু মিলিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পর্যটন শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস